প্রত্যয় ডেস্ক: লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় দেশটিতে অবস্থান করা প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান।
বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘গতকাল বিকেল আনুমানিক ৬টায় লেবানন সমুদ্রবন্দরে অতিউচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। এ বিস্ফোরণে লেবাননের জানমাল ও স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০০ জনের মতো লোক মারা গেছেন। আর চার হাজারের অধিক লোক আহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, লেবাননে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় কর্মরত। এ ঘটনায় চার বাংলাদেশি মারা গেছেন। এছাড়াও ৯৯ জন লোক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজন রফিক হারিরি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা যাতে ভালো হয়, দূতাবাসের তরফ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সমুদ্রবন্দরে আমাদের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ, যেটি ইউনিফিলে কর্মরত ছিল এবং বিস্ফোরণস্থল থেকে এর দূরত্ব ছিল ২০০ গজ। আমরা ঘটনা জানার সাথে সাথে আমি আমার কর্মকর্তা ও দূতাবাসের কর্মচারীরা অতিদ্রত সমুদ্রবন্দরে চলে যাই বিএনএস বিজয় জাহাজের কাছে। জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলি। দেখতে পাই জাহাজের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও কর্মকর্তা ও নাবিক মিলে প্রায় ২১ জনের মতো বিভিন্ন ধরনের আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। দুইজন মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। আমি আমার কর্মকর্তা দিয়ে দুইজনকে আমেরিকান হাসপাতালে পাঠাই। তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়। একজনের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। একজন এখনও গুরুতর। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে ইউনিফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছয়জন কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টার করে এবং বাকি ১০ জনকে সড়কপথে জাতিসংঘ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’
মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান বলেন, লেবাননের এ পরিস্থিতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবসময় হালনাগাদ তথ্য নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। যাতে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি এখানে ভালো থাকে, তাদের সুচিকিৎসা প্রদান করা এবং বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে কোনো চিকিৎসা বা খাদ্যসহায়তা পাঠানো যায় কি না।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের দেশ থেকে যদি চিকিৎসা বা খাদ্যসহায়তা এখানে আসে তবে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং লেবাননের সাথে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এছাড়া আমরা পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছি। লেবাননে বর্তমান পরিস্থিতি বেশ থমথমে। সবাই বেশ আতঙ্কগ্রস্ত। বাংলাদেশি কমিউনিটি যারা আছেন, তারাও আতঙ্কগ্রস্ত। আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি। লেবাননে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ দূতাবাসও তাদের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করছে।’